পর্ব: ০২ লেখা: আবির আর সেদিন হিজাব সরানোর সাথে সাথে আমি যা দেখলাম,সেই দৃশ্য দেখার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।
” আমি নিধির দিকে তাকিয়ে আনমনে মাশাআল্লাহ্ পড়ে ফেললাম।চোখ ফেরাতে পারছিলামনা নিধির থেকে। যেমন ওর চোখ,তেমনি ঠোঁট,তেমনি ওর পুরো মুখ।গাল দুটো লাল হয়ে আছে,মনে হচ্ছিলো মেকাপ করেছে ও।গরমের জন্য হয়তো খুব কষ্ট হচ্ছিলো ওর।আল্লাহ্ কি অপরুপ ভাবে সৃষ্টি করেছেন নিধিকে। ” ও যখন লজ্জায় চোখ বার বার টিপ টিপ করে স্যারের দিকে তাকাচ্ছিলো।তখন মনে হচ্ছিলো সময় টা যদি ওখানেই থেমে যেতো। ” তারপর স্যর বল্লেন,এত সুন্দর মেয়ে।কথা বলো কেন পরীক্ষায়?বাসা থেকে কিছু শিখে আসোনি? >জ্বী স্যার শিখেছি। >তাহলে চুপচাপ লিখা শুরু করো। নিধি চুপ করে লিখা শুরু করে দিলো। আমি লিখবো আর কি,ওকে দেখে তো আমি ওখানেই শেষ। ” পরীক্ষার হলে বার বার ওকে দেখছিলাম। কোনমতে এক্সাম শেষ হলে যখন ও বাইরে বেড়িয়ে আসে ক্লাস থেকে,তখন সবাই বলছিলো ওকে এসে এসে, এত সুন্দর মুখ টা ঢেকে রাখো কেন? আমিও ওর সামনাসামনি গিয়ে বল্লাম, এই সুন্দর মুখটা যেন কেউ আর কোন দিন না দেখে। এভাবে ঢেকেই আসবি। ” নিধি কোন কথা বলেনা। সেদিনের পর নিধির সাথে আমার আর দেখাই হয়না। সেদিন শেষ পরীক্ষা থাকায় ও আর কলেজে আসেনা। আমিও যাইনা। ” অনেক দিন কলেজে হয়ে যায় কলেজে আসেনা ও।আমারো খুব খারাপ লাগছে ওকে দেখতে না পেয়ে। এর মধ্যে ঝর্ণা আর নিধিকে ফোন দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে যাই আমি। কিন্তু তবুও আসেনা ওরা। পরে অনেক কল আর মেসেজের পর ওরা কলেজে আসে। আমিও যাই। সেদিন কথা বলি কিছু ক্ষণ। এরপর থেকে প্রায় সময়ই কল দিতে থাকি,মেসেজ দিতে থাকি নিধিকে। নিধি আমাকে একদিন বিরক্ত হয়েই জানায়, আমি যেন ওকে আর এত বেশি কল না দেই। ও বিরক্তবোধ করে। ওর কথা বলতে বা ম্যাসেজিং করতে ভালো লাগেনা। অইদিকে আমার তো ওর প্রেমে পড়ে দুচোখের ঘুম হারাম। কি করবো কিছুই বুঝতেছিনা। পরের দিন ও যখন কলেজে আসে, আমি ওকে আমাদের ছাত্র ছাত্রী মিলনায়তনের একটা রুমে নিয়ে যাই। আর বলি, জানিস আমি না একটা মেয়েকে ভালবেসে ফেলেছি। >বলিস কি? কে?কবে থেকে চলছে এসব হুম?আমাকে কেন বলিস নি আগে? ঝর্ণা জানে? >কেউ জানেনা।তোকেই বলবো আগে। >তাহলে দেরি করছিস কেন?বলনা কে? >কিন্তু তার আগে বল,আমি যাকে ভালোবাসি তার নাম শোনার পর বা তাকে দেখার পর আমাদের বন্ধুত্ব টা নষ্ট করবিনা। >আরে কি বলছিস।বন্ধুত্ব কেন নষ্ট করবো? তাছাড়া আমার কোন শত্রুও নেই যে তুই তাকে ভালোবাসলে আমি তোর সাথে বন্ধুত্বটাই নষ্ট করে দিবো হি হি। >তবুও কথা দে আগে তুই। >তুই তো আবার ঝর্ণাকে...?হুম? >আরে নাহ।কি বলিস। >তখনই ঝর্ণা এসে উপস্থিত। কি কথা হচ্ছে রে? >আমি বলছি আমি বলছি। >আমাদের রৌদ্র না প্রেমে পড়েছে। >তাই নাকি? কেরে সে দোস্ত? বল তাড়াতাড়ি। তুই এসেই তো দিলি ঝামেলা করে দাঁড়া বলছি। আমি তখন নিধিকে রুমের ভেতর যেই আয়নাটা আছে, ছাত্র ছাত্রীরা এই রুমে এসে রেস্ট করে,চুল আচড়ায়,পরিপাটি হয় বলে এখানে একটা বড় আয়না আছে দেয়ালে লাগানো। আমি নিধিকে সেই আয়নার সামনে দাঁড় করে বলি, >আমি এই মেয়েটাকে ভালোবাসি।খুব ভালোবাসি। মেয়েটা কি আমার বউ হবে? নিধি তৎক্ষণাত আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে উত্তর দেয়, >এসব কি বলছিস তুই? >যা বলছি ঠিকই বলছি, আমি তোকে ভালোবাসি। বিয়ে করবি আমাকে? >এ সম্ভব না রৌদ্র। সম্ভব না। >কেন সম্ভব না? >কারণ তুই আমার সম্পর্কে কিছুই জানিস না। আমাকে ভালোবাসা যতটা সহজ ভাবছিস,ততটা সহজ না। >আমি কিছুই শুনতে চাইনা।আমি শুধু জানি আমি তোকে ভালোবাসি। আর তুই আমাকেই বিয়ে করবি। নিধি আমাকে উত্তর দেয়, আজ থেকে তুই আমাকে একটা ম্যাসেজ আর কলও দিবিনা। এই বলে ও চলে যায়, আমি দাঁড়াতে বল্লেও ও আর দাঁড়ায় না। ও বাসায় যাবার পর আমি ওকে ফোন দেই। কিন্তু ও আমাকে ইগ্নোর করতে থাকে। অবশেষে ও আমাকে সব কিছু থেকে ব্লক করে দেয়। আর আমিও নাছর বান্দা,সব কিছু থেকে আমাকে ব্লক করে দিলেই কি আমি চুপচাপ বসে থাকবো নাকি। আমিও পরের দিন সকালেই রওনা দেই ওদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে। সকাল যখন ৭ টা তখনই পা রাখি ওদের বাসায়। আমি দাঁড়িয়ে আছি ওদের গেটের সামনে,কিছুতেই ভেতরে যাবার সাহস পাচ্ছিনা। যদি আমাকে দেখে ও আরো রেগে যায়,ওর পরিবারের সবার সামনে আমাকে অপমান করে। তাহলে তো এ বাড়ীর জামাই হবার আগেই মান সম্মান সব শেষ। তাই গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছি। লোকজন আসা যাওয়া করতে দেখলে মোবাইল টিপতে থাকি,বা মোবাইল কানে নিয়ে বোঝাই মোবাইলে কথা বলছি। এভাবে প্রায় আট টা বেজে গেলো, তখনই দেখি একটা বাচ্চা ছেলে ওদের বাড়ীতে ঢুকছে। আমি ওকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় যাও বাবু? ও উত্তর দেয়, নিধি আপুদের বাসায়। আমি বললাম,দাঁড়াও একটু। তারপর দ্রুত মানিব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে তার উলটো পিঠে লিখে ফেললাম, “আমি তোদের গেটের সামনে। যদি না আসিস তাহলে সারাদিন এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো।“
0 Comments
লেখা: আবির
পর্ব: ০১
- কলেজে বোরকার হিজাব দিয়ে মুখ সব সময় ঢাকাই থাকতো ওর।
অথচ ওর অই চোখ দেখেই আমি ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। বন্ধুরা বলতো,মুখ খুললে যদি দেখিস অপ্সরী না ভূত্নী। তখন কি করবি? বলেছিলাম ও অপ্সরীই হবে,ভূত্নী হবেনা।না দেখে প্রেমে পড়াটা রিস্ক হলেও আমি।সেই রিস্কটা নিয়েই ফেল্লাম। ও ছিলো আমার বান্ধবী ঝর্ণার বেস্ট ফ্রেন্ড। সেই সুবাদে আমার সাথেও মাঝে মাঝে কলেজে টুকটাক কথা হতো। ধীরেধীরে ঝর্ণার জন্য নিধির সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয় আমার।পড়াশোনায় একদম মন ছিলোনা আমার।ঝর্ণা আর নিধি জোর করেই পড়াতো আমাকে। বন্ধুত্ব টা হলেও মুখ দেখার সুযোগ পাচ্ছিলাম না নিধির।আর আমি নিজে থেকে চাইও নি দেখতে সেধে সেধে। নিধি যখন কথা বলতো আমি ওর চোখের দিকে চেয়ে থাকতাম।ওর কণ্ঠস্বর মারাত্মক সুন্দর। সবাই বলতো,দোস্ত যেই মেয়ের কন্ঠস্বর ভালো হয় অই মেয়ে দেখতে সুন্দর হয়না। মনে মনে ভাবলাম আমি ওকে ভালোবাসি এটাই যথেষ্ট।ও যেমনি হোক তাতেই চলবে আমার। আমি আসলে ওর প্রেমে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সাহস পাইনি ওকে বলতে।যদি বন্ধুত্ব টা নষ্ট হয়ে যায় সেই ভয়ে। একদিন কলেজের এক ছেলে এসে আমাকে বলে তোর ফ্রেন্ডটার সাথে আমাকে প্রেম করিয়ে দিবি? তুই যা খাইতে চাবি খাওয়াবো।ভাবলাম ঝর্ণার কথা বলছে হয়তো। পরে জিজ্ঞেস করলাম কোনটারে ভাই? যখন উত্তর দিলো সুনয়না। তখন আমার মাথায় রক্ত উঠে গেছে।কারণ সুনয়না বলে আমিই ডাকি নিধিকে।ওর চোখ সেই রকমের সুন্দর বলে। আমি সংগে সংগে শার্টের কর্লার ধরে বলি,খবরদার এইদিকে নজর দিবিনা। ঝর্ণা এসে আমাকে সেদিন থামায়।জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে আমি বলিনি ওকে। যদি নিধিকে বলে দেয় ও। এভাবে না দেখেও ভালোবাসতে লাগলাম নিধিকে আমি।আমি ওর মনি ভালোবাসি,রুপ যেমন হোক সমস্যা নেই আমার। আমি ওকে নিয়মিত ম্যাসেজ দিতাম পড়াশোনার কথা জিজ্ঞেস করে।মাঝে মাঝে কলও দিতাম। কিন্তু চাঁদমুখ খানা দেখার সৌভাগ্য আমার হচ্ছিলোনা।ও ক্লাসেও হিজাব পরেই থাকতো। একদিন পরীক্ষার সময় অনেকেই কথা বলে বলে সবাইকে প্রশ্নের উত্তর বলে দিচ্ছিলো। আর নিধি এবং ঝর্ণার সিটও পাশাপাশি পরাতে নিধিও ফিসফিস করে ঝর্ণাকে বলে দিচ্ছিলো। তাই স্যার অইদিন নিধিকে কড়া আদেশ করলো হিজাব খোলার। যাতে ও আর বলে দিতে না পারে ঝর্ণাকে। মুখ খোলা থাকলে বলতে গেলে ধরা পড়ে যাবে স্যারের কাছে তাই। স্যার ছিলো খুব পাজি। তাই বেচারির সেদিন হিজাব টা মুখ থেকে সরাতেই হলো। আর সেদিন হিজাব সরানোর সাথে সাথে আমি যা দেখলাম,সেই দৃশ্য দেখার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। |
Categories |